তাকদীর বা আল্লাহ নির্ধারিত ভাগ্য; আসলেই ইসলাম কি বলে?
তাকদীর বা আল্লাহ নির্ধারিত ভাগ্য;
আত্মহত্যা যদি কপালে লেখাই থাকে তাহলে ব্যক্তির পাপ হবে কেন❓
🔲যার সাথে যার বিয়ে লেখা আছে কপালে,তার সাথে তার বিয়ে হবে।এটা কি ফিক্সড❓
🔲আল্লাহ কি নিজেই বাছাই করে দেয় অমুকের জন্যে অমুককে❓
======================================
❎"যা কিছু হয় সবকিছুই আল্লাহর হুকুমেই হয়" এই বাক্যটা শুদ্ধ নয় মোটেও।
সবকিছুই যদি আল্লাহর হুকুমেই হয়ে থাকে তাহলে যিনি চুরি ডাকাতি ছিনতাই করছেন তিনিও কি পরোক্ষভাবে আল্লাহর হুকুমেই এগুলো করছেন❓
বা তাকদীরে লেখা আছে বিধায় এগুলো করছে❓
নাহ, তাকদীরের বিষয়টি এমন নয়। তাহলে কেমন?
উত্তর জানার আগে আমরা আরেকটা বিষয় ক্লিয়ার হয়ে নিই চলুন।
✅আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আমি তাদের (মানুষদের) সামনে পথ তুলে ধরেছি,হয় সে কৃতজ্ঞ হোক অথবা কুফরি করুক।”
(সুরা দাহর ৩ নাম্বার আয়াত)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ইচ্ছে এবং কর্ম এই দুটোর ব্যাপারেই স্বাধীনতা দিয়েছেন। কে কি করছো করো।ভাল করছো নাকি মন্দ করছো সবই লিপিবদ্ধ হচ্ছে, কিয়ামতে সেই হিসেবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম,
আপনাকে ১ ঘন্টা সময়ের এক্সাম দিতে বলা হলো চাকরির জন্যে।এখানে ভুল লিখবেন নাকি শুদ্ধ লিখবেন নাকি কিছুই লিখবেননা তা একান্তই আপনার ইচ্ছা।চাকরির মালিক আপনাকে এই স্বাধীনতা দিয়েছেন।যদি রেজাল্ট ভাল হয় তাহলে চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে যাবেন।
তেমনি জান্নাত...এতটুকুতে ক্লিয়ার হয়েছেন তো?
🚳আপনি রাস্তার মোড়ে বসে আছেন।
মোড়টা ৯০ডিগ্রি এংগেলের কাছাকাছি ধরে নিন।
পাশেই সাইনবোর্ডে বড় করে লেখা আছে "গাড়ী আস্তে চালান, ১০০কিমি স্পীডে গাড়ী এই মোড় ঘুরতে পারবেনা, মোড় ঘুরানোর সময় ১০০কিমি স্পীডে গাড়ী থাকলে তা এক্সিডেন্ট করবেন।”
এবার আপনি দেখতে পেলেন কানে দুল হাতে ব্যাচলাইট পরা দুইজন ছেলে বাইক নিয়ে সেই লেভেলের স্পীডে আসতেছে। এখানে যে মোড় আছে তা তাদের খেয়াল নেই।
🔞ফলাফল = এক্সিডেন্ট।
এখন আপনি কি বলবেন❓
কর্তৃপক্ষ এই সাইনবোর্ডে লিখে রেখেছিল তাই এক্সিডেন্ট হলো❓
মানুষের প্রতিটা কাজ কর্ম আল্লাহ লিখে রেখেছেন এটা ঠিক।তবে আল্লাহ লিখে রেখেছেন বিধায় আমরা করছি, ব্যাপারটা এমন নয়।
বরং আমরা কখন কি করব কি খাব ইত্যাদি এগুলো আল্লাহ আগে থেকেই জানেন, যেহেতু তিনি ইলমে গায়েবের অধিকার রাখেন, আর তাই তিনি লিখে রেখেছেন।বুঝতে অসুবিধা হলে এক্সিডেন্ট এর উদাহরনটা আবার পড়ুন।
⭕এবার আসি, দুইটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা জেনেছে অনেক মানুষ।আর তা হচ্ছে, আল্লাহ প্রতিটা মানুষের জোড়া বানিয়েছেন।
এটা এমন নয়, বরং সুরা যারিয়াত এর ৪৯ নং আয়াত ও সূরা ইয়াসিনের ৩৬ নং আয়াতের যথার্থ অর্থ হচ্ছে প্রতিটি জীবন্ত প্রানী বা উদ্ভিদকে সৃষ্টি করেছেন জোড়ার মাধ্যমে।অর্থাৎ পুংলিঙ্গ স্ত্রী লিঙ্গের কম্বিনেশন এর মাধ্যমে।
যদি সবার জন্যেই জীবনসঙ্গী সৃষ্টি করেই রাখেন তাহলে যারা বিয়ের আগেই মারা যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে কি বলবেন?
অতএব, প্রতিটি ছেলে-মেয়ের জোড়া রয়েছে এটা উপরিউক্ত রেফারেন্স এর আয়াতের বুঝ নয়, বরং প্রতিটি সৃষ্ট জীব সৃষ্টির পিছনে জোড়া কাজ করেছে এটা ঠিক।ক্লিয়ার করতে পারলাম কিনা?
⭕আরো কিছু আয়াত নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়ে,
যেমন কেউ বলে, কুরআনেই তো আছে ভাল ছেলেরা ভাল মেয়েই পাবে, ভাল মেয়েরা ভাল ছেলেকেই পাবে।এটাও সঠিক বুঝ নয়।
সুরা নুরের ৩ নাম্বার আয়াতে সেখানে মূল ভাবটা হচ্ছে কোন ব্যাভিচারী ছেলে যেন ব্যাভিচারীনী নারী বা মুশরিকা নারী ছাড়া বিবাহ না করে, অনুরুপ মেয়েরাও।এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে পড়েছিলাম, যদি বর ভাল হয় আর বউ খারাপ চরিত্রের হয় তাহলে সংসার টিকবে?কিংবা বউ ভাল বর খুবেই খারাপ,শান্তি থাকবে?বর বউ দুইজনেই ভাল, তাদের মাঝে শান্তি থাকবেনা?
অবশ্যই।
-
একজন ভাল একজন খারাপ এমন হলে সংসারে শান্তি আসা খুব মুশকিল আর তাই আল্লাহ তায়ালা অমন করে বর্ননা করেছেন।
ভালর জন্য ভাল, খারাপের জন্যে খারাপ, এটা ফিক্সড করে দেননি বরং ভালর জন্যে ভাল কিছুই পারফেক্ট হবে এটাই বুঝিয়েছেন।
নিজে ভাল হলেই যদি যে ভাল পাওয়া যাবে ব্যাপারটা এমন নয়।
অনেকে নিজে ভাল কিন্তু পায় খারাপ। আবার অনেকে নিজে খারাপ অথচ পায় ভাল।
লুত (আঃ) ছিলেন একজন নবী।
অথচ ওনার স্ত্রী ভাল ছিলনা।
যদিও পরে বিচ্ছেদ হয়।
আবার ফেরাউন ছিল খারাপ অথচ তার স্ত্রী আছিয়া (আঃ) ছিল ভাল।
সুরা নুরের লিয়ান সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় দেখবেন একজন সাহাবীর স্ত্রী অন্যজন পুরুষের সাথে যেনায় লিপ্ত হয়েছিল।
যদি ভালরা ভালকেই পেয়ে থাকবে তাহলে এসব ঘটনা কি?
✅“দুশ্চরিত্রা নারী-সকল দুশ্চরিত্র পুরুষ- সকলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষ-সকল দুশ্চরিত্রা নারী-সকলের জন্য উপযুক্ত । (সূরা নূর : ২৬)
⏩উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে, দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য, এমনিভাবে তার বিপরীত। কেননা আল্লাহ তা’আলা মানব চরিত্রে স্বাভাবিকভাবে যোগসূত্র রেখেছেন। অতএব দুশ্চরিত্রা ব্যাভিচারিণী নারী ব্যাভিচারী পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে, এমনিভাবে তার বিপরীত এবং সৎ চরিত্রা নারীরা সাধারণত সৎ চরিত্র পুরুষদের প্রতিই আকৃষ্ট হয়ে থাকে এমনিভাবে তার বিপরীত। প্রত্যেকেই নিজ নিজ আগ্রহ অনুযায়ী জীবন-সঙ্গী খোঁজ করে নেয় এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সে এমনই পায় । বিঃদ্রঃ উল্লেখিত আয়াতে বলা হয়েছে যে দুশ্চরিত্রা নারী-সকল দুশ্চরিত্র পুরুষ-সকলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষ-সকল দুশ্চরিত্রা নারী-সকলের জন্য উপযুক্ত , এখন কেউ যদি উপযুক্ত হয়েও না পায় সেটা আল্লাহর ইচ্ছা কেননা সে উপযুক্ত ছিল কিন্তু আল্লাহ কোন বিশেষ কারনে এমন করেছেন , তবে মূলত সৎ চরিত্রের পুরুষ সৎ চরিত্রের নারীর সাথেই সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি , তেমনি অসৎ চরিত্রের পুরুষের অসৎ চরিত্রের নারীর সাথে সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
Add caption |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন